হালাল হারাম ফরজ ওয়াজিব সুন্নত এগুলোর হুকুম কি

 হালাল কি

হালাল বলা হয় শরীয়তের দৃষ্টিতে যেসব বস্তু ব্যবহার করা বৈধ তাকে হালাল বলে। জায়েজ ও হালাল সমর্থ্য বোধক শব্দ এটার একই অর্থ বোঝায়।

হারাম কি
হারাম হলো হালাল এবং ফরজের বিপরীত অর্থাৎ যা নিষিদ্ধ হওয়াটা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। হারামকে হালাল মনে করলে কাফের হয়ে যায় আর বিনা ও জুড়ে হারাম কাজ করলে কাফের হয় না তবে ফাসেক হয়ে যায়। হারাম কাজ ত্যাগ করা ফরজ। নাজায়েজ এবং হারাম একই অর্থ বোঝায়।

ফরজ কি ফরজ বলা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সকল বিধি-নিষেধ গুলো অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে কড়া আদেশ রয়েছে তাকেই ফরজ বলা হয়! যেমন: কালেমা নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত এলমে দ্বীন শিক্ষা করা জিহাদ করা সত্য কথা বলা ইত্যাদি এগুলো হচ্ছে ফরজ।
ফরজ আবার দুই প্রকার: ১. ফরজে আইন ২ ফরজে কিফায়া
১. ফোরজে আইন বলা হয় যে কাজ প্রত্যেক বালেগ বুদ্ধিমান নর-নারীর ওপর সমান ভাবে ফরজ তাকে ফরজে আইন বলে যেমন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আবশ্যক পরিমাণ এলমেদিন ইত্যাদি।
২. ফরজে কেফায়া বলা হয় যে কাজ কোন ব্যক্তি বা কোন একটি জনগোষ্ঠী আদায় করার কারণে সকলে-ই গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পায় এবং যদি সেটা কেউ আদায় না করে তাহলে সকলেই গুনাহগার হয়। যেমন: জানাজার নামাজ এবং মৃত ব্যক্তির কাফন দাফন। কোন ব্যক্তির জানাজার নামাজ বা কাফন দাফন যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আদায় করে নেয় তাহলে সকলেই সেটা আদায় না করার গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। পক্ষান্তরে এটা যদি কেউই আদায় না করে তাহলে সকলেই গুনাহগার হবে।

ওয়াজিব কি
ওয়াজিব হল ফরজের ন্যায় আবশ্যকরণীয়। কিন্তু ফরজ এবং ওয়াজিবের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতোটুকু যে ফরজ তরফ করলে বা ফরজকে অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যায়। কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফের হয় না কিন্তু ফাসেক হয়। যেমন: বিতিরের নামাজ, কোরবানি, ফিতরা ইত্যাদি।

সুন্নত কি..!
সুন্নত দুই প্রকার ১. সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং তার সাহাবীগণ যে সকল কাজ সর্বদাই করেছেন বিনা ওজরে কখনো ছাড়েননি তাকেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে।
যেমন: আজান, একামত, খতনা, বিবাহ, ইত্যাদি। এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা ওয়াজিবের মতই গুরুত্বপূর্ণ বিনা ওজরে তা ছাড়লে বা অভ্যাস করলে অধিক পাপী হতে হয়। তবে কখনো ওজরবশত ছুটে গেলে কাজা করতে হয় না।
২. সুন্নতে গায়রে মক্কাদা বলা হয় যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এবং সাহাবীগণ করেছেন তবে ওজর ছাড়াও কোন কোন সময় তা তরফ করেছেন একে সুন্নতে জায়েদা বা সুন্নতে আদিয়াও বলে। সুন্নাতে গায়েরে মক্কাদা আদায় করলে সব আছে কিন্তু আদায় না করলে গুনাহ নেই।

মোস্তাহছান কি
মোস্তাহছান বলা হয় যাকে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম ভালো মনে করেছেন

মুস্তাহাব কি
মুস্তাহাব হলো যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ করেছেন কিন্তু সর্বদাই করেননি কোন কোন সময় করেছেন ‌। এবং এটা করলে সব আছে না করলে গুনাহ নেই। মুস্তাহাব কে নফল এবং মান্দুও বলা হয়।

মাকরুহ তাহরিমি কি
মাকরুহ তাহরিমি হল ওয়াজিবের উল্টোটা, যা স্বীকার না করলে কাফের হয়না তবে ফাসেক হয়ে যায়। বিনা অজরে মাকরে তাহরীম করাও ফাসেকী।

মাকরুহ তানযীহী
মাকরুহ তানযীহী হলো যে কাজ আপনি করতে পারবেন কিন্তু সেটার জন্য কোন সওয়াব থাকছে না কোন আজাব ও থাকতেছে না।

মুবাহ কি
মুবাহ হলো যা মানুষের ইচ্ছাধীন, যে ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে কড়া বা না করার স্বাধীনতা এখতিয়ার দিয়েছেন। যেমন মাছ গোশত খাওয়া, পানাহার করা, কৃষি কাজ করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা, দেশ ভ্রমণ করা ইত্যাদি। তবে মোবা কাজের সঙ্গে যদি ভালো নিয়ত সংযুক্ত হয়, তাহলে তা সওয়াবের কাজ হয়ে যায়। যেমন পানাহার করলে এই নিয়তে করা যে, এই পানাহার একমাত্র আল্লাহ আমাকে দান করেছেন এবং এই পানাহার করার পরে আমার শরীলে যে শক্তি সঞ্চয় হবে সেগুলো দ্বারা আমি আল্লাহর ইবাদত করব বা আল্লাহর দিন প্রচার করব তাহলে সেটি একটি সোয়াবের কাজের মধ্যে অন্তরভুক্ত হবে।

মাসয়ালা ফতোয়া ও তাহক্বীক কাকে বলে

প্রিয় পাঠক আমরা সকলেই বিভিন্ন আলেম-ওলামা বা ইসলামিক স্কলারদের মুখে বা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে এ শব্দগুলো শুনে থাকি মাসয়ালা, ফতোয়া ও তাহক্বীক এ সকল শব্দগুলো আমরা প্রায় সচরাচর শুনে থাকি কিন্তু যেহেতু এগুলো আরবি পরিভাষা এজন্য আমরা অনেকেই এগুলোর বিষয়ে বুঝিনা যে কোনটাকে কি বলে তাই আজকে আমরা এই বিষয়টি জানবো। মাসয়ালা: মাসয়ালা বলা হয় কোন সমস্যা বা দাবি বা চাহিদা বা প্রশ্ন এগুলোকে বলা হয় মাসয়ালা।

এরপর ফতোয়া: ফতোয়া বলা হয় কারো মত বা কারো রায় বা সিদ্ধান্তকে। অন্যভাবে বলতে গেলে যে ব্যক্তি তার প্রশ্ন বা সমস্যা আরেকজনের কাছে তুলে ধরে তাকে বলা হয় মাসালা এবং যে এটার সমাধান বা রায় দেন তাকে বলা হয় ফতুয়া। আর তাকে শব্দের অর্থ এই যে যেমন পরীক্ষা করা তদন্ত করা অনুসন্ধান করা। এক কথায় বলতে গেলে একজন তার সমস্যা বা প্রশ্নের কথা আরেকজনের কাছে তুলে ধরলে তাকে বলা হবে মাসআলা এবং যে ব্যক্তির কাছে এ প্রশ্নটি করেছে এবং সে ব্যক্তি এটিকে অনুসন্ধান করে তদন্ত করে এর ফলাফল টা বের করবে এই অনুসন্ধান করাটাকে বলা হয় তাহকীক এবং এরপরে যে রাইটা দিবে বা সমাধানটা দিবে সেটাকে বলা হয় ফতোয়া।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url