কুরবানী সংক্রান্ত জরুরী তথ্য
কুরবানীর পোশুর কোন কোন ত্রুটি থাকলে কোরবানি করা যাবে না
আমরা সকলেই জানি যে উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা দ্বারা আমরা কোরবানি দিয়ে থাকি এ সমস্ত প্রাণীর যে সকল ত্রুটি থাকলে ওই প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যাবে না যেমন: কুরবানীর পশুর চোখে যদি এই পরিমাণ সমস্যা থাকে যে সে চোখে দেখে না তার চোখের সামনে ঘাস রাখলে সে দেখতে পায় না তাহলে ওই পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। যদি পায়ে সমস্যা থাকে এবং সমস্যা এই পরিমাণ থাকে যে কোরবানির স্থান পর্যন্ত সে হেঁটে যাইতে পারবে না অর্থাৎ তার ত্রুটিটা প্রকাশ হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। এবং সেটা যদি দুর্বল হয় কোরবানির স্থান পর্যন্ত যাইতে পারবে না হলে সে প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যায় না। সিং যদি ভেঙে যায় এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয় কোন বড় ধরনের তাহলে সে পশু দিয়ে কোরবানি করা যায় না। কিন্তু যদি অল্প কিছু অংশ ভেঙে যায় সামান্য এদিক সেদিক হয় তাহলে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা যায়। মোটকথা কোরবানি করার জন্য যে পশুগুলো হবে সেগুলোকে বয়স হওয়ার সাথে সাথে ত্রুটিমুক্ত হতে হবে যতটা ইষ্টপুষ্ট এবং যতটা ভালো পশু দিয়ে কোরবানি করা যায় ততই উত্তম।
কোন কোন পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়
যে সমস্ত পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়, কিছু কিছু পশু আছে যেগুলো দ্বারা কুরবানী করা যায় যেমন উট, গরু, মহিষ, যদিও মহিষ দিয়ে কোরবানি করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে এছাড়াও ছাগল, ভেড়া, দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা যায় এবং এগুলো সবই হলো গৃহপালিত পশু। এ সমস্ত পশু কোরবানির জন্য উপযুক্ত হতে হলে নির্দিষ্ট বয়স সীমায় পৌঁছতে হবে। যেমন, উট কমপক্ষে ৫ বছর বয়স হলে কোরবানি করা যেতে পারে। গরু কমপক্ষে দুই বছর বয়সে উপনীত হলে কোরবানি করা যাবে। এবং ছাগল, দুম্বা, ভেড়া, কমপক্ষে এক বছর বয়সে উপনীত হলে তারপরে সেটাকে কোরবানি করা যাবে। কিন্তু এর নিচে যদি বয়স হয় তাহলে সেগুলো এমনি সাধারণভাবে জবাই করে খাওয়া যায় কিন্তু সেটার দ্বারা কোরবানি বিশুদ্ধ হবে না।
গৃহপালিত পশু ছাড়াও অন্য কোন প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যায়
সাধারণত আমরা যে সকল প্রাণী দ্বারা কোরবানি করে থাকি এসব এসব প্রাণী ছাড়াও কেউ যদি অন্য কোন প্রাণী যেমন, বন্য যে সমস্ত প্রাণী রয়েছে যেমন হরিণ, বন্য গাভী এগুলো দিয়ে যদি কেউ কুরবানী করতে চাই তাহলে সে কুরবানী জায়েজ হবে না। এর বাইরেও ছোট যে সমস্ত প্রাণী রয়েছে যেমন: হাঁস, মুরগি, কবুতর এগুলো দিয়ে যদি কেউ কুরবানী করতে চাই তাহলেও কুরবানী জায়েজ হবে না।
কুরবানীর পশু জবাই করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া
আমরা অনেকেই জানি সহি বুখারী এবং মুসলিমের মধ্যে বর্ণনা এসেছে যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করতেন এর থেকে আমরা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবে করার দিকে উৎসাহ পাই। এরপরও আমরা অনেকেই নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবের করতে সাহস পায় না এর একটি মূল কারণ হলো আমরা কোরবানি করার সঠিক নিয়ম জানি না যদিও বিষয়টি অত্যন্ত সহজ একটি বিষয় কুরবানীর পশু জবেহ করার ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় যদি আপনি খেয়াল করে আদায় করতে পারেন তাহলেই আপনার কোরবানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে আপনার যবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। এরমধ্যে প্রথম বিষয়টি হলো আপনি বিসমিল্লাহ বলে যবেহ শুরু করবেন এটা একটি জরুরী বিষয় আল্লাহ ছাড়া আর কারো নামে যেন কোরবানির শুরু না হয় সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এবং বিসমিল্লাহ বলে যবেহ শুরু করবেন এবং জবেহ এর সময় আপনি খেয়াল রাখবেন যেন কোরবানির পশুর খাদ্যনালী শ্বাসনালী এবং দুই পাশে থাকা দুইটি চিকন নালী এই নালী গুলো কাটা হল আপনার জন্য জরুরী এই নালী গুলো কাটা হলেই আপনার কোরবানি বিশুদ্ধ হয়ে গেল এরপরে আপনি কোরবানির জন্য জবেহ করতেছেন না আকিকার জন্য জবেহ করতেছেন সেটা তো আপনার মনের মধ্যে আছেই।
এতোটুকু নিয়ম কুরবানী বা যবেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জরুরী এরপরেও কোরবানির আগে পরে কিছু দোয়া রয়েছে এবং কিছু নিয়ম রয়েছে। এরপরও যদি পরিপূর্ণ পদ্ধতি বলতে চাই তাহলে বলতে হবে সর্বপ্রথম ছুড়ি বা চাকুটা বেশ ধারালো করে নিতে হবে, এরপরে আমাদের যা করতে হবে সেটা হল পশুকে তার বাম পাশ করে শোয়াতে হবে। এভাবে শোয়াল শোয়াইতে সুবিধা হয় এবং তার পাগুলোও কিবলার দিকে থাকে না। এরপরে একটি দোয়া পড়তে হয় যেটি নিয়ে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে ওই হাদিসের সনদ নিয়ে মতভেদ রয়েছে কেউ সুন্নি বলেছেন কেউ গায়রে সুন্নি বলেছেন। এরপর যে বিষয়টি আপনি খেয়াল রাখবেন সেটি হল যবেহ এর সময় অবশ্যই আপনি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলবেন এরপরে (আল্লাহুম্মা মীনকা অলাক) এটি বলাও কোন কোন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এটুকু বলেই আপনি ছুরিচালনা শুরু করবেন। এবং যবেহ করা শেষে যদি নিজের পশু নিজেই জবহ করে থাকেন (আল্লাহুম্মা তাকাব্ব্য হু মিন্নি) এটা না বললেও কোন অসুবিধা নেই তবে বলাটা উত্তম আর যদি আপনি অন্যের পশু জবেহ করে থাকেন তাহলে আপনি বলবেন (আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন এরপরে তার কথা উল্লেখ করবেন। এটি আপনি বাংলাতেও বলতে পারবেন। এছাড়াও আমাদের কোরবানির ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষ্য করা উচিত সেটি হল কোরবানি করার পরে যেন, কোরবানির পশুর রক্ত ইত্যাদি এগুলো কোনভাবেই কোন জায়গায় পড়ে না থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উপরোক্ত বিষয়গুলির উপরে আমল করার তৌফিক দিন। আমিন!
কুরবানির গোশত বন্টনের সঠিক নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম আমাদের মাঝে অনেক সময়ই এই মতভেদ গুলো সৃষ্টি হয় যে আসলে কোরবানির গোশত কয় ভাগে বন্টন করতে হয় বা আমি সাধারণত যেই কথাটা প্রচলিত আছে তিনভাগ এছাড়াও যদি এটার বিপরীতে বা একটু কম বেশি করে যদি আমি করতে চাই তাহলে সেটা আমার কোরবানি হবে কিনা এ বিষয়ে আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে বুঝতে পারবো, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর মতে তিন ভাগ করা উত্তম তবে এটা আবশ্যক নয় আপনি এক ভাইকে নিজে খাবেন একভাগ আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের মাঝে দিবেন আরেকভাগ গরীব-দুঃখীদের মাঝে বন্টন করবেন এটাই উত্তম কিন্তু এটাই আবশ্যক নয়। পুরোটা গোস্ত যদি আপনার লেগে যায় যেমন আপনার পরিবারের সদস্য বেশি বা ইত্যাদি কারণে প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি পুরোটাই ভোগ করতে পারেন কিন্তু যদি আপনার কাছে অবশ্যই অতিরিক্ত গোস্ত থাকে তাহলে আপনি আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বন্টন করুন গরিব দুঃখীদের দান করুন কারণ সূরাতুল হাজ্জের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলে। فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُواالْبَابِسَ الْفَقِيرَة তোমরা কোরবানি দিয়ে গোস্ত নিজেরাও খাও এবং অভাবীদেরকেও দাও সহি বুখারীতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এক বর্ণনায় বলেন। কোরবানির গোশত তোমরা খাও, অন্যদের খাওয়াও, এবং রাখো অর্থাৎ আপনি চাইলে রাখতেও পারবেন কিন্তু উত্তম হচ্ছে তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে খাওয়া এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং একভাগ অভাবেই সুবিধা বঞ্চিত গরিব-দুঃখীদের মাঝে বন্টন করা এবং অবশ্যই যাদের সামর্থ্য আছে বেশি বেশি কোরবানি করুন এবং সেই গোশত দিয়ে অনেক সুবিধা বঞ্চিত মানুষ আছে তাদের মাঝে বন্টন করুন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এ কথাগুলির উপরে আমল করার তৌফিক দিন এবং আমাদের সকলের কুরবানী গুলোকে আল্লাহ তাআলা কবুল করুন আমীন।
ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url